নিমো একটি গ্রামের নাম। কলকাতা এবং মোগলসরাইয়ের মাঝখানে, কে জানে কোনো এক জায়গায়। ইদানিং মোগলসরাইয়ের অবশ্য নাম বদলে দিনদয়াল উপাধ্যায় না কি একটা হয়ে গেছে। মোগলাই পরোটার নামও বদলে যেকোনোদিন শ্যামাপ্রসাদ হয়ে যাবে, কিন্তু নিমো আদি ও অকৃত্রিম। কারণ তার নাম বিশেষ কেউ জানেনা। সে গ্রামের ফুটেজ খাবার একেবারেই কোনো কারণ ছিলনা। কিন্তু খেয়ে গেল। ** কারণ সুকান্ত ঘোষ। সে নিমো গ্রামে জন্মে শুধু কলকাতায় ঠ্যাং বাড়িয়েছে তা নয়, গোটা দুনিয়ায় দিগ্বিদিক চষে বেড়িয়েছে। খাওয়াদাওয়া করেছে বিস্তর, পড়াশুনোও করেছে গুচ্ছের, কিন্তু কিমাশ্চর্যমতঃপরম, এখনও সে নিমো গ্রামেরই ছেলে। এবং আশ্চর্য কলমে লিখে ফেলেছে নিমোর উপাখ্যান।
সে এক অদ্ভুত জগৎ। সেখানে পরীক্ষায় ফার্সট হয়ে ফিরলে পাড়ার জ্যাঠা আশ্চর্য হয়ে বলেন, "দেশটার কালে কালে কী অবস্থা হল"। প্রাইজে বই পেলে বাড়িতে আলমারি বানাতে হবে বলে গুচ্ছের গজগজ হয়। সে ছেলে পরে দুনিয়াদারিও করে। কিন্তু তাও বস্তুত নিমোরই গল্প। ক্যাপ্টেন নিমো যেমন দুনিয়া ঘুরলেও তাঁর আসল ঠিকানা ছিল নিজের সাবমেরিনই, এ অবিকল তার বাংলা সংস্করণ। বাংলা বলতে, মাটির কাছে, সস্তা মদের মতো কিকসমৃদ্ধ, দেশজ যা খুশি বুঝতে পারেন। কিন্তু যাই বুঝুন, এর স্বাদই আলাদা। পড়লে মনে হবে শীর্ষেন্দুর কিশোরোপন্যাসের জগতে ঢুকে পড়া হয়েছে। কেবল তফাত একটাই। এখানে বানানোর কিছু নেই। চরিত্রগুলি একেবারে জলজ্যান্ত। তারা গ্রাম্য কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত। সহজ কিন্তু সরল নয়। সবার উপর, নিখাদ সত্য। সুকান্ত গুল কিছু দেয়নি তা নিশ্চয়ই না, একটু আধটু টেরিয়ে বেঁকিয়ে না লিখলে উপাখ্যান হয়না, কিন্তু আখ্যানের সত্য বলে কিছু যদি হয়, সেখানে সুকান্ত আস্ত যুধিষ্ঠির।
সেই কারণেই এই লেখা গ্রাম নিয়ে ভেঙে দেয় সমস্ত স্টিরিওটাইপ। গ্রাম মানেই সরল গোলগাল চাষীভাই নয়। গ্রাম মানেই জোতদার বনাম ভূমিহীনদের শ্রেণীসংগ্রাম নয়। গ্রাম মানেই কেবল অদ্ভুত এক কথ্যভঙ্গী নয়। গ্রাম এক আস্ত অন্য রিয়েলিটি। অদ্যাবধি লেখা অন্য কোনো আখ্যানে এ জিনিস পাওয়া গেছে বলে বিশ্বাস হয়না। এটা অতিশয়োক্তি নয়। এই লেখার কিছু অংশ পর্বে পর্বে প্রকাশিত হয়েছে গুরুচণ্ডালির পাতায়। যাঁরা পড়েছেন, মন্তব্য লিখেছেন, তাঁরা সকলেই এর সঙ্গে একমত হবেন। ফলে এ শুধু একটি গ্রামের কথা নয়। এমন এক বাস্তবতার কথা, নাগরিক দৃষ্টি থেকে যা এখনও অনাস্বাদিত।