Category : Memoirs & Biography,NONFICTION,Literature
Author : Gautam Mitra
Publisher : Rhito Prakashan
Binding Type : Hard Cover
Cash On Delivery
15,000 Pin Codes
Low Delivery Charge
All Year Discount
গুরুচণ্ডালীতে প্রকাশিত কবি যশোধরা রায়চৌধুরীর আলোচনা:
ইতিহাসের এই পর্যায়ে সাহিত্যে আধুনিকতার বাহক হয়ে উঠল বই। বই তো শুধু লেখা দিয়ে ভরা কিছু পাতার সমাহার নয়। বই আত্মপরিচিতির বাহক। বইয়ের রচনার গায়ে অনুস্যূত হয়ে থাকে রচয়িতার আত্মা। রোমান্টিকদের আগে কবিতা ছিল বার্তাবহ, বক্তব্যনির্ভর, বাগ্মিতাধর্মী। কবি কবিতার মাধ্যমে তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতি, চিন্তা, কাহিনি ইত্যাদি তুলে ধরতেন। সেখানে কবিতার ‘আমি’ আর কবির মধ্যে বিন্দুমাত্র ফারাক নেই। কবি যেন সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন শ্রোতা বা পাঠককে তার ভাব ব্যক্ত করবেন বলে। রচনাকারের কাছে পাঠকের একটা স্পষ্ট মুখচ্ছবি ছিল। রচনাকারের ব্যক্তিগত বৃত্তেরই অন্তর্ভুক্ত তারা।প্রথম যুগের রোমান্টিকরাও অনেকাংশে বয়ে চলেছিলেন এই বাগ্মিতার পরম্পরা। ১৮৫০-পরবর্তী যুগে বাগ্মিতা থেকে ঢের দূরে সরে গিয়ে সাহিত্য হয়ে উঠল রচনাধর্মী। তার কেন্দ্রস্থলে বক্তা না, এসে পড়ল রচনা, অনবয়ব অশরীরী এক পাঠকের উদ্দেশ্যে। রচনা পাঠকের কাছে এসে হাজির হল ছাপাখানার মাধ্যমে। উদ্দিষ্ট পাঠকের মুখের মতো রচনাকারের মুখও রচনার মধ্যে ঝাপসা, রচনাকারের সত্তা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে আত্মগোপন করে রইল বইয়ের মার্জিনে, কালো অক্ষরের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে পাতার ভাঁজে ভাঁজে। ঊনবিংশ শতকের প্রথম খণ্ড অব্দি রচনার সাফল্য মাপা হত বইয়ের কাটতির নিরিখে, শতাব্দীর দ্বিতীয় খণ্ডে যে আধুনিক সাহিত্যের প্রাদুর্ভাব হল তার গুরুত্ব মাপা শুরু হল রচনার পেছনে কতটা সময়, কতখানি শ্রম ব্যয়িত হয়েছে তার নিরিখে। রচনা প্রকাশ করার আগে রচয়িতা সুদীর্ঘ সময় নিচ্ছেন, কাটছেন, জুড়ছেন, বদলাচ্ছেন, মকশো করছেন তাঁর রচনা। তার ফলে প্রকাশিত রচনার পূর্ববর্তী এক বিশাল প্রাকরচনা-সংকলন তৈরি হচ্ছে, যার নাম হতে পারে পাণ্ডুলিপি, ব্যক্তিগত ডায়েরি, চিঠিপত্র। সেখানে তারা নিজের লিখন বিষয়ে অজস্র চিন্তাভাবনা লিখে রাখছেন বা আদান-প্রদান করছেন। এই অপ্রকাশিত নিভৃত প্রাক-রচনার মধ্যে প্রকাশিত রচনার অনেক শুলুক রয়ে যাচ্ছে। আধুনিক রচনা যেহেতু এক নৈর্ব্যক্তিক পরিসর, রচয়িতা সেখানে সশরীরে হাজির থাকতে পারেন না। রচয়িতাকে খুঁজে নিতে হয় জলের নিচের হিমশৈলের মত প্রাক-রচনা সম্ভারের মধ্যে।’—তৃণাঞ্জন চক্রবর্তী, বোদলেয়ার প্রসঙ্গে
গৌতম জীবনানন্দকে নির্মাণ করছেন এইভাবে। জলের নীচে হিমশৈলের বাকিটা। ওপরে আমাদের চেনা ছকের একটা আধটা জীবনানন্দের কবিতার বই অথবা উপন্যাস। গৌতম খুঁজেও খুঁড়ে তুলছেন। মনিয়াকে নিয়ে লেখা ‘পরির সেমিজ থেকে স্খলিত স্বর’ যেমন। Y-কে নিয়ে রচনাগুলো। ‘প্রেতিনীর রূপকথা’-র বিনতা-কে নিয়ে বৃষ্টির আশ্চর্য ছায়া অংশটি। আক্রান্ত করে আমাদের। পাঠকের সঙ্গে জীবনানন্দের একটা আলাদা সেতু তৈরি হয়।
তা কি বাস্তব? তা কি ছায়া? তা কি মায়া? কে বলে দেবে? বাস্তব বলে অসংখ্য সাল-তারিখের অরণ্যে হারিয়ে যেতে আমি কোনোদিনই ভালোবাসিনি। আমি তো জীবনানন্দপ্রেমী, আমি তো জীবনানন্দ গবেষক নই!